Advertisement

ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলো, যেগুলো আমাদের ছোটবেলা ভরিয়ে রাখত

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

চেনা গানের অজানা কথা ১

নমস্কার বন্ধুরা, ইদানিং কাজের চাপ থাকায় ব্লগ লেখা হয়ে উঠছিল না । তাই পুজোর ছুটিতে শুরু করেদিলাম আমার কিছু প্রিয় গানের নেপথ্য কথা । আজ প্রথম পর্ব । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে । 

 

একটা কুইজের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি । আচ্ছা বলুন তো, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও গীতা দত্তের গাওয়া “নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়” এবং “সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো” গান দুটি কোন উত্তম সুচিত্রা সিনেমা জুটির গান ?  

 

হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ছবির নাম  “ইন্দ্রাণী” ১৯৫৮ সালের ১০ই অক্টোবর, এই ছবি রিলিজ করেছিল কোলকাতার রূপবানী, অরুনা, ভারতী প্রেক্ষাগৃহে। ১৪ রিলের সাদাকালো ৩৫ মিমি ছবি।  এই ছবির পরিচালক ছিলেন নীরেন লাহিড়ী ।  ছবিতে ছিলেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, পাহাড়ি সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, চন্দ্রাবতী দেবী, তুলসী চক্রবর্তী, গঙ্গাপদ বসু, তরুনকুমার, শ্যাম লাহা প্রমুখ শিল্পীগন ।  কিন্তু এটা কি জানেন এই ছবির সুরকার নচিকেতা ঘোষ মহঃ রফিকে দিয়ে একটা হিন্দি গান গাইয়েছিলেন ।  আজ শোনাব সেই গান তৈরির একটা অজানা গল্প ।    

 

ইন্দ্রাণী ছবির পোস্টার

“ইন্দ্রাণী” ছবির গানগুলি সুর করার সময় থেকেই নচিকেতা ঘোষ ঠিক করে রেখেছিলেন ছবিতে একটি হিন্দি গান থাকবে এবং সেটি মহঃ রফি গাইবেন । গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার গানটি লিখলেন, কিন্তু ছবির প্রযোজক বেঁকে বসলেন ।  তাঁর প্রধান কারন, সেই সময় মহঃ রফির খ্যাতি তুঙ্গে এবং ছবিতে গান গাওয়ার জন্য প্রচুর টাকা পারিশ্রমিক নেন ।  নচিবাবু প্রযোজককে বোঝালেন যে হেমন্তবাবু ও গীতা দত্তের গান রেকর্ডিং –এর জন্য তিনি এখন বোম্বাই-তে তাই যদি রফিসাহেবকে একটা রিকোয়েস্ট করা যায় ।  তখন প্রযোজক পরিস্কার জানিয়ে দিলেন তিনি এর জন্য ৫০০/- টাকার বেশী খরচা করতে পারবেন না । 

গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার

 

সুরকার নচিকেতা ঘোষ
সুরকার নচিকেতা ঘোষ


নচিকেতা ঘোষ তখন হেমন্তবাবুর শরণাপন্ন হলেন ।  এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, হেমন্তবাবুর সঙ্গে মহঃ রফির একটা খুব ভালো সম্পর্ক ছিল ।    একদিন সকালে ওনারা মহঃ রফির বাড়ি এলেন । রফি সাহেবের সাথে নচিকেতা ঘোষের আলাপ করিয়ে দিলেন হেমন্তবাবু । তারপর রফিসাহেব শুনলেন নচিবাবুর ইচ্ছের কথা ।  নচিকেতা ঘোষ শোনালেন সেই হিন্দি গানটা যেটি তিনি রফি সাহেবকে দিয়ে গাওয়াতে চান ।  রফি শুনে খুব খুশী হয়ে বললেন, “বাঃ বহুত আচ্ছা সুর দিয়া আপনে” । নচিকেতা ঘোষ তখন মরিয়া হয়ে হাতজোড় করে বললেন, “গানটা আপনাকে গাইতেই হবে রফিসাহেব আর এর জন্য আমি ৫০০/- টাকার বেশী পারিশ্রমিক দিতে পারব না” । 

মহঃ রফি
মহঃ রফি

বাঙালীবাবুর কথা শুনে রফিসাহেব ভির্মি খাবার জোগাড়,  মাত্র ৫০০/- টাকায় মহঃ রফির গান !  তারপর সামলে নিয়ে একটু হেসে রফিসাহেব নচিকেতা ঘোষের হাত ধরে বললেন, “আপকা সুর বহুত মিঠা আউর আপ মেরা হেমন্তদাদা কে সাথ আয়ে হ্যয়, আপ মেরা ফিস কা চিন্তা ছোর দিজিয়ে, ম্যায় আপকা সুর কিয়া গানা জরুর রেকর্ড করুঙ্গা” । আসলে সেই সময় শিল্পীদের মধ্যে একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাভক্তি ও সন্মান ছিল যেটা এখনকার সময়ে হয়তো খুব বিরল ।  তারপর ওই ৫০০/- টাকা পারিশ্রমিকেই মহঃ রফি সাহেব গাইলেন ইন্দ্রাণী ছবির সেই বিখ্যাত গান “সব কুছ লুটা কর” ।   গানটা খুব শুনতে ইচ্ছে করছে তো ! তাহলে দেরি না করে নীচের ভিডিও তে এ একটা ক্লিক শুনে ফেলুন এই দুস্প্রাপ্য গানটি আর কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না ।                  

 

 

ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত......।