Advertisement

ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলো, যেগুলো আমাদের ছোটবেলা ভরিয়ে রাখত

সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

হারিয়ে যাওয়া সিনেমা

 

ভোলে বাবা পার করেগা


১৯৭৭ সালের ঘটনা, শ্রাবণ মাস, রেডিওতে অথবা শিবরাত্রির দিনে বিভিন্ন জায়গায় রেকর্ড প্লেয়ারে হঠাৎ বাজতে শুরু করল আরতি মুখোপাধ্যায়ের একটা সিগনেচার গান ‘বাঁক কাঁধে তুলে, তারকেশ্বরে চলে সতী জয়বাবা বলে, ভাগ্যে তার কি আছে, জানতে চায় সে বাবার(মহাদেব) কাছে’  ব্যাস সেই শুরু, তারপর থেকে ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-বৌ, সবাই ‘বাবা তারকনাথ’ সিনেমায় দেখা সন্ধ্যা রায়ের স্টাইলে বাঁক কাঁধে তুলে তারকেশ্বর ট্রেকিং করা শুরু করল ।

বাবা তারকনাথ ছবির রেকর্ডের ফ্রন্ট ইনলে

সবার মনে একটা প্রশ্ন কি হবে আমার ভবিষ্যৎ ? একমাত্র বাবা বিশ্বনাথের কাছে হয়ত এর উত্তর আছে, তাই অতি কষ্ট করে পদব্রজে ভক্তরা দলবেঁধে আজও বিশেষ কিছু তিথিতে বাবার কাছে ধর্না দেন।  

 

অথচ মজার কথা ‘বাবা তারকনাথ’ সিনেমাটা রিলিজ হবার আগে পর্যন্ত কেউ নিজেদের ভবিষ্যৎ-এর মনস্কামনায় বাবার কাছে যাবার এতো ঘটা দেখা যায় নি ।  ১৯৭৭ সালে রিলিজ হওয়া পরিচালক অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের এই ‘বাবা তারকনাথ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সন্ধ্যা রায়, বিশ্বজিত, অনুপকুমার, গীতা দে, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বোম্বাইয়ের তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুলোচনা চ্যাটার্জি ।   মূলত ভক্তিমূলক ছবি হলেও এর জনপ্রিয়তা তৎকালীন বঙ্গদেশের প্রায় অনেকের মধ্যে একটা ভক্তিভক্তি

রেকর্ডের ব্যাক ইনলে

গদগদভাব জাগাতে সক্ষম হয়েছিল । আমার মা ছিল বাংলা সিনেমার পোকা । উত্তম-সুচিত্রা অথবা সদ্যরিলিজ হওয়া অনেক সিনেমা দুপুরবেলার শো-তে মা দেখতে যেত বাবা অথবা আমাদের প্রতিবেশী মাসিমার সঙ্গে । ‘বাবা তারকনাথ’ দেখে মা একেবারে অভিভূত । পরে মায়ের কাছে এই সিনেমার অলৌকিক কিছু আজব কাণ্ডকারখানার কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল একদিন বাঁক কাঁধে নিয়ে তারকেশ্বরে যাব ঠিক সন্ধ্যা রায়ের স্টাইলে ।  অনেক পরে অবশ্য গিয়েছিলাম, তবে বাঁক কাঁধে নিয়ে নয়, নিছক ঘোরার উদ্দেশ্যে । ছবির গানগুলোও সাঙ্ঘাতিক হিট করেছিল । রেডিওতে প্রত্যেক সপ্তাহে ছায়াছবির অন্যান্য ছবির গানের পাশাপাশি ‘বাবা তারকনাথ’ সিনেমার একটা গান থাকতোই । তবে আমার শোনা সব থেকে বেশী বেজেছিল আরতি মুখোপাধ্যায়ের একটা গান ‘বাঁক কাঁধে তুলে’, মান্না দে-র ‘শিবশম্ভু ত্রিপুরারি’, আশা ভোঁসলের ‘তুমি সূর্য, তুমি চন্দ্র’ আর দ্বিজেন
মুখোপাধ্যায় ও অংশুমান রায়ের গাওয়া ‘বাঁক কাঁধে চলরে, জয় বাবা বলরে’ ।   গানের কথা লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও সুর দিয়েছিলেন নীতা সেন । অথচ গল্প ছিল অত্যন্ত সাদামাটা, একেবারে পারিবারিক ছবি । ভগবানের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটাই হোল এই সিনেমার মোদ্দা কথা । ছবির নায়ক বিশ্বজিত ঘোর নাস্তিক, হিন্দুধর্মের কোনও আচারবিচারের তোয়াক্কা করে না।  বাইরের জুতো পরে খাবার ও ঠাকুরঘরে দুমদাম ঢুকে পড়ে । 
বাঁক কাঁধে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়

নায়িকা সন্ধ্যা রায় আবার ঠিক এর বিপরীত ।  সিনেমার গল্পে তিনি খুব ছোট্ট থেকে লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু শিবপুজো করেন আর একদিন শিবলিঙ্গের সামনে বিভোর হয়ে গান গাওয়ার (‘তুমি‘তুমি সূর্য, তুমি চন্দ্র’ – আশা ভোঁসলে) সময় এক বিষধর সাপ তার বিশাল ফনা তুলে ছোবল মারতে ভুলে যায়, এমনই ছিল সেই গানের ভক্তিরস, যা মানুষ তো কোন ছার একটা অবলা প্রাণীকেও সম্মোহিত করে।  তারপর বিভিন্ন আজগুবি ঘটনার মধ্যে দিয়ে নায়িকা সন্ধ্যা রায় তার নায়ক বিশ্বজিতের মনে ঈশ্বর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনে ।  ব্রতশক্তি ও পার্বণের মাহাত্ম্য ছবির হিরো অনুভব করে একেবারে ছবির শেষে । অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় বেশ কিছু ভক্তিমূলক ছবি করলেও এই 'বাবা তারকনাথ' ছবির মতো আর কোন ছবি তাঁকে এতটা জনপ্রিয়তা দিতে পারেনি বলে মনে হয়।   তবে এই ছবির মাধ্যমে গ্রামবাংলার প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটা আজগুবি ধারনা জন্মে গিয়েছিল । কোন লোক যদি সাপের কামড় খায় তাহলে ব্রতশক্তির মাধ্যমে সেই সাপ আবার সেই ব্যাক্তির কাছে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এবং নিজের উগরে দেয়া কড়া বিষ আবার তুলে নেয় নিজের শরীরে । 
সিনেমার সেই আজগুবি দৃশ্য  

আজও এই আজগুবি ধ্যানধারনার জন্য গ্রাম বাংলার বহু মানুষ সাপের কামড়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যায় আর অপেক্ষা করে কখন সেই সাপ এসে নিজের বিষ নিয়ে যাবে, যার ফলে প্রাণ হারায় বহু মানুষ ।               

এই সিনেমার সাঙ্ঘাতিক জনপ্রিয়তার উপর ভর করে, এই সিনেমার প্রযোজক কেদারনাথ আগরওয়াল এবার এর হিন্দি ভার্সন করার জন্য উদ্যোগী হলেন । ইতিমধ্যে ১৯৭৫ সাল নাগাদ এই প্রযোজক ‘জয় সন্তোষী মা’ নামক একটি বিখ্যাত ভক্তিমূলক ছবির যুক্ত ছিলেন । তাই সেই ছবির জনপ্রিয়তার কথা ভেবে  বোম্বাই-এর বিখ্যাত সিনেমা কোম্পানি ‘রাজশ্রী প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেড’ এগিয়ে এল এই ছবির প্রচারে।   ১৯৮০ সালে ‘রাজশ্রী প্রোডাকশন’ ব্যানারে রিলিজ হল এই সিনেমার হিন্দি ভার্সন । ছবিতে অভিনেতা অভিনেত্রীরা সবাই এক থাকলেও গানে এল একটা বড় পরিবর্তন ।

বাবা তারকনাথ ছবির হিন্দি রেকর্ডের কভার

  
বাংলা ছবিতে গান লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার কিন্তু হিন্দি ছবির জন্য গান লিখলেন বিখ্যাত কবি প্রদীপ ।  লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া সেই বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানটা মনে আছে ? ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’, ১৯৬৩ সালে রিলিজ হওয়া এই গানের কথা লিখেছিলেন এই বিখ্যাত হিন্দিভাষী কবি ।  হিন্দি ভার্সন-এ  গানের সংখ্যাও বেশ কমে গেল, যেখানে বাংলা সিনেমায় ছিল মোট আটটি গান সেখানে হিন্দি ভার্সন-এ গানের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল মাত্র চারটিতে ।  বাংলায় গান গেয়েছিলেন মান্না দে, আরতি মুখোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, দ্বিজেন
মুখোপাধ্যায় ও অংশুমান রায় সেখানে হিন্দিতে গাইলেন আরতি মুখোপাধ্যায় ও ভুপিন্দর সিং ।  কিন্তু হায়, গল্প এক হওয়া সত্ত্বেও এবং ‘রাজশ্রী প্রোডাকশন হাউজ' পাশে থাকা সত্ত্বেও হিন্দিভাষী বাবা তারকনাথ একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল ।   হিন্দিভাষী লোকেরা এই গল্পটা ঠিক নিল না ।        

 

শেষ করার আগে একটা  তথ্য দিই । ‘বাবা তারকনাথ’ বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে আরও একটি রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছিল । পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের গঠন যা মুখ থুবড়ে পরেছিল সুদীর্ঘ ৩৪ বছর পর ।  শোনা যায়, সেই সময় ব্রিগেডে বামফ্রন্ট সমাবেশের চেয়েও কত শতগুন মানুষ উন্মাদের মতো বাবার ধামে যাত্রা করত চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাস। শ্রাবণ মাস আবার বাবা ভোলানাথের জন্মমাস ও বিয়ের মাস । বলা বাহুল্য এই

১৯৭৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন জ্যোতি বসু

শ্রাবনমাসেই বাবার ধামে সর্বাধিক জনজোয়ারে বামফ্রন্টের সন্তান থেকে ধরে অন্যান্য সব ডান, আধা ডান-বাম, আঁকাবাঁকা দলের সন্তানগণও সামিল হতে শুরু করে ।  তৎকালীন  নেতারা বোঝাতে শুরু করেন বাবার কাছে তার সব সন্তানই সমান, অথবা এই বাবা যেহেতু দাতা-ত্রাতা এবং রাগী বাবা তাই যাবতীয় দলাদল একেবারে তলাতল । কিছু না হোক – ভোলানাথ ষাঁড় আছে না ! একবার যদি গুঁতিয়ে দেয় তাহলে আর রক্ষা নেই ।   তাই সবাই মিলে বল “ভোলে বাবা পার করেগা”।

 

                                                               ছবির সেই বিখ্যাত গান 

প্রবীর মিত্র

৩০/১১/২০২০

তথ্যসূত্র ঃ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত সন্ধ্যা রায়ের সাক্ষাৎকার, উল্টোরথ ও সমস্ত ছবি ইন্টারনেট ও ইউটিউব হতে প্রাপ্ত।

 

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

বোরলীন - বঙ্গজীবনের অঙ্গ

 বোরলীন - বঙ্গজীবনের অঙ্গ 

“শীতের দিনে লেপ-কম্বল

কমলালেবুর কোয়া,

পশমজামা চড়ুইভাতি

নতুন গুড়ের মোয়া

এমনি না স্মৃতির সাথে জড়িয়ে চিরদিন

সুরভিত এন্টিসেপ্টিক ক্রিম বোরলীন”

-      ঋতুপর্ণ ঘোষ

 

ছোটবেলায় খুব ডানপিটে ছিলাম বলে মায়ের খুব চিন্তা ছিল । খালি তুলনা করা হোত আমার শান্তশিষ্ট দাদার সাথে । প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরতাম শরীরে কাটাছেঁড়া নিয়ে, সেটা বন্ধুদের সাথে মারপিটই হোক বা ফুটবল খেলা, প্রচণ্ড বকুনির পর মা সস্নেহে লাগিয়ে দিত বোরলীন ।  বাবার দাড়ি কামানোর সময় ব্লেডে গাল কেটে গেলে দারুন হৈ চৈ, মা সঙ্গে সঙ্গে হাজির হত সবুজ রঙের একটা বোরলীন টিউব নিয়ে ।
গৌর মোহন দত্ত
বোরলীনের জনক শ্রীযুক্ত গৌর মোহন দত্ত
 
সেই সময় বিবিধ ভারতীতে শ্রাবন্তি মজুমদারের জিঙ্গল, তার সাথে সেইসময় বিজ্ঞাপন অফিসে চাকরি করা এবং তারপরে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা একটি ছড়া ও ফাটাফাটি কিছু দুর্ধর্ষ বেতার নাটকের দৌলতে বোরলীনের প্রচার এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিল যে প্রায় প্রত্যেক বাঙ্গালীর সব সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল এই বোরলীন যা আজও অন্যকোন এন্টিসেপ্টিক ক্রিমের ভিড়ে হারিয়ে যায় নি । 
 

সময়টা ১৯২৯ সাল, শ্রীযুক্ত গৌরমোহন দত্তের হাত ধরে পত্তন হোল একটি কোম্পানি, জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল ।  ইতিহাসের অলিন্দে হাঁটলে দেখা যাবে সেই সময় স্বদেশী আন্দোলন বেশ বৃহৎ একটা আকার নিয়েছে ।   অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের অর্থনীতিক শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিপ্লবের আগুন জ্বলছে ।  জোর দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র ভারতে তৈরি জিনিষের ব্যবহারের উপর, তার সাথে চলছে বিলেত থেকে আমদানি করা নানা ধরনের দ্রব্যসামগ্রী বর্জন,  ঠিক এই সময় যেমন মারন করোনার জন্য চিনকে দায়ী করা হচ্ছে ও তার সাথে বর্জন করা হচ্ছে সস্তার চিনাসামগ্রী ।   গৌরমোহন দত্ত এই স্বদেশী আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করতেন ।   তাঁর মাথায় সবসময় ঘুরত এমন একটি ক্রিম আবিস্কার করতে হবে যেটি বিলেত থেকে আমদানি করা ক্রিমের থেকে কোন অংশে কম নয় তার সাথে এটা যেন ছোটখাট কেটে বা ছড়ে যাওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে ।  তিনটি উপাদান, যেমন  এন্টিসেপ্টিক বোরিক এসিড, জিঙ্ক অক্সাইড এবং আনহাইদ্রাস ল্যাননিন, এই সব নিয়ে তিনি তৈরি করলেন একটি সাদা রঙের ক্রিম । এই নতুন ক্রিমের নামকরন করতে গিয়ে তার মাথায় এল ‘এন্টিসেপ্টিক বোরিক পাউডার’ ও তেল-এর ল্যাটিন শব্দ ‘অলিয়াম’ , আর এই দুটো শব্দকে একত্রিত করে দাঁড়াল ‘বোরলীন’ ।  গৌরমোহন দত্তের নিজস্ব বাড়ীতেই ছিল এই বোরলীন তৈরির কারখানা ।  আজও উত্তর কোলকাতার গিরীশ এভিনিউতে গেলে এই বোরলীন হাউস চোখে পড়বে ।   

বোরলীনের পুরোন বিজ্ঞাপন

যেটা বলছিলাম, বোরলীন তো আবিস্কার হোল কিন্তু এটার লোগো কি করা যায় ?  অবশেষে অনেক চিন্তা করে তিনি ঠিক করলেন তাঁর প্রোডাক্টের লোগো হবে কোন মানুষ নয়, প্রাণী,  আর সেটা হোল হাতি, কারণ হাতি যেমন বিশাল, শক্তিশালী তেমনি ধীরস্থির ।  তাই হাতির ছবি প্রিন্ট করে একেবারে নামমাত্র দামে বাজারে এল বোরলীন আর কিছু দিনের মধ্যে সাড়া ফেলে দিল গৌরমোহন দত্তের এই আবিস্কার ।  তিনি প্রমান করে ছাড়লেন তাঁর প্রোডাক্ট বিলেত থেকে আমদানি করা সমগোত্রীয় কোন প্রোডাক্টের থেকে কোন অংশে কম নয় ।   সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি এই ক্রিম ব্যবহার করাটা একটা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়াল ।

 ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট, ভারতের আসন্ন স্বাধীনতা উপলক্ষে, গৌরমোহন দত্তের পুত্র শ্রীযুক্ত দেবাশিস দত্ত মহাশয়, কোলকাতার খবরের কাগজগুলিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানালেন উনি ভারতের এই বিশেষ সময়ে উপহারস্বরূপ সবাইকে বোরলীনের একটি প্রোডাক্ট উপহার দিতে চান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ।  ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই আগস্ট উত্তর ও দক্ষিন কোলকাতার দুটি জায়গা থেকে প্রায় এক লক্ষের উপর

১৪ই আগস্টের সেই বিজ্ঞাপন

বোরলীন বিতরণ হোল, যেটা জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছে আজও খুব একটা গর্বের বিষয় ।  শোনা যায় জহরলাল নেহেরুর বিশেষ প্রশংসা পেয়েছিল এই ক্রিম ।  কোম্পানির প্রচারপ্ত্র জানাচ্ছে, ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞানী অদিতি পান্থের সঙ্গে এন্টার্কটিকা গিয়েছিলেন কোলকাতার সুদীপ্তা সেনগুপ্ত ।  সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তাঁদের সঙ্গী ছিল বোরলীন ।  ভারতীয় সেই সমস্ত সেনা যারা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে তাঁদের জন্য এই ক্রিম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আজও বিতারিত হয় । 

এটা আজও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার যে, ১৯২৯ সালে তৈরি হওয়া একটা প্রোডাক্ট আজও ২০২০ সালে সমান জনপ্রিয় শুধুমাত্র তার গুনগত মান ধরে রাখার জন্য । ২০১৫ সালে জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আন্যুয়াল টার্নওভার ছিল প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আর এই টাকার প্রায় ৮০ শতাংশ এসেছিল শুধুমাত্র এই ক্রিম থেকে । সেই ২০০৩ সাল থেকেই ভারতের সুপার ব্রান্ডের মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে রেখেছে এই বোরলীন ।  বর্তমানে এই ক্রিমের পাশাপাশি জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আরও একটি প্রোডাক্ট বাজারে এনেছে সেটা হোল ‘এলিন’ মাথার তেল ।     জি ডি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জানাচ্ছে যে বোরলীন তৈরির সময় যে সমস্ত আবর্জনা উৎপন্ন হয় সেগুলি বায়ো ডিগ্রেডবেল, অর্থাৎ এর দ্বারা পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না ।  ভারতবর্ষের সীমা ছাড়িয়ে আজ বিদেশেও বোরলীনের চাহিদা খুব একটা কম নয় ।  

 

 
প্রবীর মিত্র
২৪/১১/২০২০ 

 

ঋণস্বীকার ঃ তথ্য ও সমস্ত ছবি ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত । 

লেখাটির প্রথম প্রকাশ ঃ  নিউজ ইন্ডিয়া প্রেস