Advertisement

ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলো, যেগুলো আমাদের ছোটবেলা ভরিয়ে রাখত

বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

চেনা গান অজানা কথা - ২

১৯৪৮ সাল । ‘অভিমান’ ছবির সূত্রে কবি ও গীতিকার শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে আলাপ হোল গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় –এর । বলা যায় প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়লেন শ্যামলবাবু, কিন্তু লাজুক প্রেমিক কিছুতেই তাঁর মনের কথা বলতেই পারেন না ।  মনের কথা তিনি প্রকাশ করতে লাগলেন একটার পর একটা প্রেমের গান লিখে । বলাই বাহুল্য, সেটি সন্ধ্যাদেবীকে না বলা কথাকে গান করে লিখে  প্রানের বন্ধু মানবেন্দ্রকে দিয়ে তিনি গাওয়াতে লাগলেন ‘মধুমালতীর বনে লেগেছে দোল’, ‘এখনো রয়েছ কেন দূরে’, ‘না যেও না মধুযামিনী’, ‘কত আশা নিয়ে তুমি এসেছিলে’ কিংবা ‘ভালো লাগে না তুমি না এলে’ ইত্যাদি সব দুর্দান্ত প্রেমের গান ।   তবে কেন জানিনা সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যায় ‘আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি’ গানটি ।  সারা গানটিতে কত প্রেম আর ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে যা  আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় মজে থাকা নব্য বাঙ্গালী প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরের কথা।   শুধু এই গানই নয়, তাঁর লেখা স্মরণীয় গানের মধ্যে আছে "আমি চলে গেলে পাষাণের বুকে লিখ না আমার নাম" (গায়ক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়), "মন বলছে আজ সন্ধ্যায় কিছু বলতে তুমি আসবে কি" (গায়িকা আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়), "আমি তোমার পাশে যেমন আছি" (গায়ক শ্যামল মিত্র), "কৃষ্ণচূড়ার স্বপ্নঝরা" (গায়িকা সুপ্রিতী ঘোষ), "মন্দিরে নয় সেথায় যাব" (গায়িকা যূথিকা রায়), "ও আমার মন যমুনায় অঙ্গে অঙ্গে ভাবতরঙ্গে" এবং "আমি নিরালায় বসে" (গায়ক মান্না দে) এছাড়া ওনার সহধর্মিণী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় -এর কণ্ঠে ওনার লেখা বেশ কিছু গান যেমন "ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে", "কাঞ্চন কাঞ্চন পাহাড়ে", "জলতরঙ্গ বাজে" ইত্যাদি গান তো এখনো অলটাইম ফেভারিট ।   তবে আজকের চেনা গান অর্থাৎ "আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি" এর অজানা কথা নিয়ে কিছু কথা ।   

 

বামদিক থেকে  গীতিকার শ্যামল গুপ্ত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বেলা মুখোপাধ্যায় , 

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
১৯৫৭ সালে ‘আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি’ গানটির লিরিকটা নিয়ে গীতিকার শ্যামল গুপ্ত এলেন বেতারের তৎকালীন অফিস গার্স্তিন প্লেসে । একটা সরল সুর ও গায়নের প্রস্তাব দিলেন মানববাবুকে ।   সেই সময় রেডিওতে লাইভ প্রোগ্রাম হত ।  মানবেন্দ্রবাবু নিজেই গানটি সুর করেছিলেন ও সেই দিন রাত্রেই  রেডিওতে একেবারে লাইভ গাইলেন ।  মানবেন্দ্রবাবুর কথায় জানা যায়, বন্ধু শ্যামল যখন গানটি তাঁর কাছে নিয়ে আসে সুরসৃষ্টির জন্য, তখন তিনি গানের লাইন পড়ে ভেবে পাচ্ছিলেন না কিভাবে এত গভীর বানীর সহজ সুর তিনি তৈরি করবেন । এদিকে আর কিচ্ছুক্ষন পরেই রেডিওতে তাঁকে গান গাইতে হবে । একেবারে ঘেঁটে গেলেন তিনি ।   একটা সিগারেট খাবার জন্য তিনি স্টুডিয়োর অন্ধকার সিঁড়ি ধরে ছাতে ওঠার সময় তিনি হটাত শুনতে পেলেন পাশের একটা অন্ধকার ঘর থেকে পিয়ানোটা কেমন যেন আপনি আপনি বেজে উঠলো ।  সবাই জানত গার্স্তিন প্লেসের ওই বাড়িতে আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় আর নিজে থেকেই হটাত হটাত পিয়ানো বেজে ওঠে । 
মানবেন্দ্র-এর মাথায় তখন ওসব কিছুই মনে নেই ।  সেই ভৌতিক পিয়ানোর শব্দ থেকে উনি গানের চলন ও প্রথম সুরটাই পেয়ে গেছেন তখন ।  দৌড়ে নেমে এসে তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন গানের স্বরলিপি করতে । সেইদিনই রাতের আসরে রেডিওতে মানবেন্দ্র গাইলেন সেই কালজয়ী গান ‘আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি’ ।  এই গানটির মধ্যে যেন একটা
haunting  ব্যাপার আছে আর শ্যামলবাবু চেয়েছিলেন মানবেন্দ্র যেন প্রেমের সংলাপের মতো করে গানটির উপস্থাপনা করেন । আর মানবেন্দ্র বন্ধুর কথা রেখেছিলেন সেটা আজও প্রমান করে গানটি শুনলে ।   এর ঠিক পরের বছর গানটি রেকর্ড আকারে বাজারে আসে । তাহলে নীচের লিংক এ ক্লিক করে শুনে নিন সেই কালজয়ী গান ‘আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি’ ।  

 

 

তথ্যঋণ ঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্টারনেট ।  

 

কোন মন্তব্য নেই: