Advertisement

ফিরে দেখা সেইসব দিনগুলো, যেগুলো আমাদের ছোটবেলা ভরিয়ে রাখত

সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

বিকাশ কথা ১

 

বিকাশ কথা

প্রবীর মিত্র

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে কলঙ্ক আছে বলেই চাঁদ এত সুন্দর। পাঁকে সে ফোটে বলে তাই সে পঙ্কজ। খলনায়ক ছাড়া কোন সিনেমায় নায়ক অসম্পূর্ণ।  অবশ্য সেই খল মুখোশের চোখেও থাকে জল। একজন খলনায়কও দর্শকের মনের আসনে অনেকখানি জায়গা করে নিতে পারেন।  আমরা সদ্য পেরিয়ে এলাম সত্যজিৎ রায় মশাই-র জন্মশতবর্ষ, অথচ বাংলা চলচ্চিত্রের অপর এক রায়মশাই-ও তাঁর জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে এসেছেন প্রায় বছর পাঁচেক হল।  গত ১৬ই মে ছিল বাংলা ছবির নায়ক হবার সব গুণ থাকাসত্ত্বেও প্রতিনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক বিকাশ রায়ের ১০৫ তম জন্মদিন (জন্ম ১৬ই মে ১৯১৬) । আজ এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব এই প্রতিনায়কের বেশ কিছু মুহূর্তের কথা। আজ প্রথম পর্ব । কেমন লাগলো জানালে খুব ভালো লাগবে।        

 

যুবকটির চেহারাটি হয়তো নায়কোচিত ছিল না, শুধু উচ্চতাটুকু ছিল, একটু বেঁকে কুঁজো হয়ে দাঁড়ানো, ঈষৎ সামনে ঝুঁকে চলা সেই যুবকের সম্বল ছিল গাঢ় কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণ এবং অবশ্যই উজ্জ্বল দুটি কুতকুতে বুদ্ধিদীপ্ত চোখ যা চোখমুখের ভাব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাষাও পরিবর্তন করে।  আর এগুলি সম্বল করেই তাঁর নিজের কলেজ, প্রেসিডেন্সিতে শরৎচন্দ্রের “বৈকুণ্ঠের উইল” নাটকে বিনোদের চরিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশ যুবক বিকাশ রায়ের।  সিনেমা বা থিয়েটার কোন কিছুর প্রতিই আগ্রহ একদমই ছিল না বিকাশের, হতে চেয়েছিলেন একজন সাহিত্যিক।  প্রেসিডেন্সিতে পড়াশুনার পাশাপাশি ‘বেদুইন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন এবং তাতে নিয়মিত ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখে হাত পাকাতেন।   অবশেষে ১৯৩৬ সালে প্রেসিডেন্সির বি.এ. পাঠ শেষ করে স্থির করলেন আইন নিয়ে পড়াশুনা করবেন।

বিকাশ রায়

 সেই অনুযায়ী ১৯৪১ সালে ল’পাস করে চকচকে কালো কোট ও গাউন শরীরে চাপিয়ে আলিপুর কোর্টে যাতায়াত শুরু করলেন।  চোখে তখন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের  মতো ব্যারিস্টার হবার স্বপ্ন।  কিন্তু অচিরেই তাঁর সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হোল।  মনে হল এটা তাঁর জায়গা নয়।  এই পেশায় থাকলে তাঁর মতো লোকের পক্ষে বেশীদূর এগোন খুব মুশকিল।  কাজে মন বসাতে পারলেন না। তাঁর শরীরে জমিদারী রক্ত, কালের নিয়মে জমিদারীটা ঘুচে গিয়ে শুধু রায় পদবীটুকুই টিকে আছে আজ।  কিছুদিন পর আলাপ হয় তৎকালীন আই সি এস ড্রূকার সাহেবের সাথে আর ওনার সুপারিশে বিকাশ যোগ দিলেন সিভিল ডিফেন্স পাবলিসিটিতে।  এরপর ১৯৪৩ সালে যোগ দিলেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে একজন স্টাফ আর্টিস্ট হিসাবে। রেডিও –এর চাকরীর সুবাদে আলাপ হোল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বানীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক প্রমুখ শিল্পীদের সঙ্গে।  এর মধ্যে হেমন্তবাবুর সাথে ঘনিষ্ঠতা একটু বেশী গাঢ় হোল কারণ বিকাশ রায় ও হেমন্তবাবু দুজনেই একসময় কোলকাতার ভবানীপুরের মিত্র  ইন্সটিটিউশনের ছাত্র ছিলেন আর দুজনের চোখেই একসময় ছিল সাহিত্যিক হবার স্বপ্ন ।  রেডিও-তে চাকরী করাকালীন আয়ত্ব করলেন মাইক্রোফোনের নানারকম ব্যবহার। কিভাবে কোন দূরত্ব নিয়ে কথা বললে কণ্ঠস্বর শ্রুতিমধুর হয় সেটা কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেই শিখতে লাগলেন।  বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কাছ থেকে পেলেন ভয়েস থ্রোয়িং সম্পর্কে নানাধরনের পরামর্শ।   এই পরামর্শ ও রেডিও-তে কাজের অভিজ্ঞতাটা পরে খুব কাজে লেগেছিল বিকাশের।  ভিলেন হিসাবে চিবিয়ে চিবিয়ে অথচ স্পষ্টভাবে সংলাপ উচ্চারণের কায়দাটা উনি খুব ভালোভাবে রপ্ত করে নিয়েছিলেন তার সাথে চার-পাঁচ রকমের কণ্ঠস্বরে খুব সুন্দরভাবে সংলাপ বলতে পারতেন। বছর দুই চাকরী করার পর আর ভালো লাগলো না রেডিও–এর চাকরী।   যোগ দিলেন ডি. জে. কীমার কোম্পানির বিজ্ঞাপন বিভাগে আর এই বিজ্ঞাপন সংস্থাতে যে সত্যজিৎ রায়ও একসময় চাকরি করতেন সেটা কে না জানে। 

একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় নাটকীয়ভাবে বিকাশের দেখা হয়ে গেল রেডিও অফিসে একদা আলাপ হওয়া সাহিত্যিক জ্যোতির্ময় রায়ের সাথে।  যেহেতু উনি সাহিত্যিক তাই রেডিও-তে চাকরী করাকালীন তার সাথে সাহিত্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হত।   ইতিমধ্যেই বিকাশ জেনেছিলেন বন্ধু জ্যোতির্ময়ের লেখা ‘উদয়ের পথে’ গল্পটি নিয়ে বিখ্যাত পরিচালক বিমল রায় নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে একটি ছবি করে বেশ হিট করেছেন এবং ছবির পাশাপাশি বই-এর বিক্রিও সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে।  কথায় কথায় বিকাশ জানতে পারলেন বন্ধু জ্যোতির্ময় এবার চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজে হাত দেবেন।  ছবির নামও ঠিক হয়ে গেছে। ‘অভিযাত্রী’।  জ্যোতির্ময় প্রস্তাব দিলেন বিকাশ ছবির নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজী কিনা।  বিভিন্ন পেশা বদল করে বিকাশ এবার একটু দ্বিধায় পড়লেন। কারণ সেই সময় যারা সিনেমায় অভিনয় করতেন তাঁদেরকে লোকে খুব একটা ভালো চোখে দেখত না, চরিত্রহীন তকমা লাগিয়ে দিত তাঁদের গায়ে।  একদিন সময় চেয়ে নিলেন বিকাশ। বাড়ীতে তিনি তাঁর স্ত্রী কমলা রায়ের সাথে পরামর্শ করলেন। তাঁর স্ত্রীর, বিকাশের উপর ছিল অগাধ আস্থা এবং স্বামীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পর্কে তাঁর দৃঢ় উচ্চধারনা ছিল।  তিনি স্বামীকে তাঁর সন্মতির কথা জানালেন। কিন্তু পরের দিন বন্ধু জ্যোতির্ময়কে সেটা জানাতে তিনি জানালেন, ছবির প্রযোজক, বিকাশের মতো কোন নতুন মুখকে নায়ক করলে ছবির জন্য টাকা ইনভেস্ট করতে পারবেন না, তাঁরা নায়ক হিসাবে চাইছেন অভিজ্ঞ অভিনেতা রাধামোহন ভট্টাচার্যকে। অগত্যা নায়িকা বিনতা রায়ের ভাই-এর চরিত্রে ১৯৪৭ সালে সিনেমায় প্রথমবার মুখ দেখানের সুযোগ পেলেন বিকাশ। ছবিটি তেমন চলল না । জীবনের প্রথম ছবিতেই বেশ বড় একটা অনিশ্চয়তার ধাক্কা খেলেন বিকাশ।  এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে হেমেন গুপ্তের পরিচালনায় “ভুলি নাই” ছবিতে দর্শকের নজরে এলেন তিনি।  ছবির নায়ক হিসাবে প্রদীপকুমার থাকলেও বিকাশ কিন্তু তাঁর অভিনয়ের গুণে সকলের নজর কাড়লেন। ছবিতে পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতে খেতে বিপ্লবী মহানন্দরূপী বিকাশ বুকফাটা আর্তনাদ করে বলে উঠেন “বন্দেমাতরম” যা প্রত্যেক দর্শকের মনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, অপরদিকে ছবির শেষের দিকে তিনি আবার একজন খলনায়ক । নায়ক প্রদীপকুমারের হাতে গুলি খেয়ে মরার আগে তার বাঁচার জন্য তীব্র আকুতি দর্শকের চোখে জল এনে দিয়েছিল। সেদিনই সবাই বুঝল বাংলা ছবিতে জন্ম নিল নতুন এক তারকা যার নাম বিকাশ রায়।   

বিকাশ রায় অভিনীত প্রথম ও দ্বিতীয় ছবির পোস্টার

 
এরপর আর বিকাশ রায়কে পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। ডি. জে. কীমার কোম্পানির পাকা চাকরী ছেড়ে তিনি পাকাপাকিভাবে সিনেমায় মন দিলেন। ১৯৪৯ –এর পর থেকে মুক্তি পেতে থাকল ‘মায়াজাল’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘কাঁকনতলা লাইট রেলওয়ে’, ‘কুলহারা’ ইত্যাদি ছবি।  ১৯৫১ সালটা ছিল বিকাশের জীবনের একটা টার্ন পয়েন্ট।   কারণ এই বছরেই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর অভিনীত তিনটি সাড়াজাগানো সিনেমা। ‘বেয়াল্লিশ’, ‘রত্নদীপ’ ও ‘জিঘাংসা’, এর মধ্যে অজয় কর পরিচালিত ‘জিঘাংসা’ ছবিতে উনি একজন পাগল প্রোফেসরের চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করলেন যিনি একজন সাইকোপ্যাথ কিলারও বটে।  এই ছবিটি স্যার আর্থার কনান ডয়েলের ‘দি হাউন্ড অফ বাস্কারভিলস’ গল্পের ছায়া অবলম্বনে।   অভিনয়ের পাশাপাশি বিকাশ ছবির জন্য কিছু টাকাও ইনভেস্ট করেছিলেন অন্যান্য প্রযোজকদের পাশাপাশি।  ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন বিকাশের অন্যতম বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি তখন বেশ জনপ্রিয় একজন শিল্পী।  তাঁর সুরে আনন্দমঠ ছবির গান তখন লোকের মুখে মুখে।   ও একটা কথা বলতে ভুলেছি, বিকাশের প্রথম ছবিতেও হেমন্তবাবু ছিলেন মিউজিক ডিরেক্টর।   ‘জিঘাংসা’ ছবিটি বেশ হিট করার পর ১৯৬২ সালে হেমন্তবাবু ছবির চিত্রনাট্যের একটু অদল বদল করে হিন্দিতে ‘বিশ সাল বাদ’ নামে একটি হিন্দি ছবি প্রযোজনা করেন সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি।  বাংলার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও বোম্বের নামকরা অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান ছিলেন এই ছবির প্রধান কুশীলব আর এটাই ছিল বিশ্বজিতের প্রথম হিন্দি ছবিতে অভিনয়।   ‘জিঘাংসা’-র মতো বীরেন নাগ পরিচালিত  ‘বিশ সাল বাদ’ ছবিটিও বেশ হিট করেছিল।   

বিকাশ রায় অভিনীত কিছু ছবির পোস্টার

ওই একই বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত দেবকীকুমার বসু পরিচালিত ‘রত্নদ্বীপ’ ছবিতে এক অন্য ধরনের চরিত্রে দেখা গেল বিকাশকে। ছবির মূলগল্প প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের। ছবিতে ‘রাখাল’ চরিত্রটি ছিল এক হতভাগ্য স্টেশন মাস্টারের, যেদিন রেলের চাকরীটি তার চলে যায় ঠিক সেইদিনই ওই স্টেশন-এ এক রেল দুর্ঘটনায় কয়েকজন প্রাণ হারান এবং তাদের মধ্যে রাখালের মতো অবিকল দেখতে একজন সন্ন্যাসীও ছিলেন। মৃত সন্ন্যাসীর ঝোলা থেকে একটি ডাইরি রাখাল হস্তগত করে এবং পড়ে জানতে পারে ওই সন্ন্যাসীর বাড়ীতে তাঁর যুবতী স্ত্রীও আছেন এবং সেই সন্ন্যাসী বাশুলীপাড়ার জমিদারপুত্র ও বিপুল ধনসম্পদের উত্তরাধিকারী।  ডাইরিটি পড়ে রাখালের মনে হয় আজ তাঁর কোন চাকরী নেই আর এই সন্ন্যাসী নিজে মারা গিয়ে তাঁর ভাগ্য বদলের সুযোগ করে দিয়েছে।   মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় রাখাল  এবং সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার বদউদ্দেশ্যে রওনা দেয় বাশুলীপাড়ার উদ্দেশ্যে এবং সেখানে নিজেকে সুনিপুণ অভিনয়ের দ্বারা ওই সন্ন্যাসী বা জমিদারপুত্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়।  কিন্তু রাখাল তাঁর মন্দ অভিপ্রায় চরিতার্থ করার আগেই সেই সন্ন্যাসীর যুবতী স্ত্রীকে ভালোবেসে ফেলে যে স্ত্রীও

বিকাশ রায় ও সন্ধ্যারানী

রাখালকে তাঁর পূর্ব স্বামী ফিরে এসেছে ভেবে তাকে স্বামীরূপে গ্রহন করে ভালোবেসে ফেলেছে ইতিমধ্যে।  একসময় রাখালের মনে খুব অনুশোচনার উদ্ভব হয়।  নিজের বিবেকের কাছে পরাজিত হয়ে রাখাল একসময়  তাঁর কোনরকম নিজের অন্যায়ের পরিনামের কথা না ভেবে এক সময় সেই মৃত সন্ন্যাসীর স্ত্রীর কাছে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করে বসে। চরিত্রের এই পরিবর্তনটুকু এবং পরিচয় প্রকাশের পর গ্লানিমুক্ত অথচ শঙ্কিত রাখালের চরিত্রটি বিকাশ রায় যেভাবে ফুটিয়ে ছিলেন তা বাংলা ছবির একটা মাইলস্টোন হয়ে আছে।  ছবিতে বিকাশের বিপরীতে চুটিয়ে অভিনয় করেছিলেন মঞ্জু দে ও সন্ধ্যারানি।  ছবিটি এতটাই হিট করেছিল যে প্রায় ২৯ বছর পর পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায় হিন্দিতে এই ছবির রিমেক করেছিলেন। এখানে রাখাল চরিত্রের যথাযত রূপদান করেছিলেন গিরীশ কনরাড ও নায়িকা ছিলেন হেমা মালিনী।  এই ছবি খুব একটা না চললেও রাহুল দেব বর্মণ সুরারোপিত ছবির গানগুলি ছিল সুপারহিট।    


বিকাশ রায়ের প্রথম নায়কের ভূমিকায় রত্নদীপ ছবির পোস্টার

              
হিন্দি রত্নদীপ ছবির রিমেক করেছিলেন বাসু চট্টোপাধ্যায়

ওই একই বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত যারা হেমেন গুপ্তের ‘বিয়াল্লিশ’ ছবিটি দেখেছেন তাঁরা ‘রত্নদীপ’ ছবির নায়ক রাখালরূপী বিকাশ রায়কে ঠিক মেলাতে খুব অসুবিধায় পড়বেন।  এখানে বিকাশ হলেন মেজর ত্রিবেদী নামে একজন অত্যাচারী পুলিশ অফিসার, যাকে পর্দায় দেখলেই মানুষের মনে একটা ঘৃণার উদ্রেগ হয়।  এই ছবিতে বিকাশ রায় ১০০ শতাংশ একজন সফল ভিলেন।   ছবির নায়ক-নায়িকা প্রদীপকুমার ও মঞ্জু দে থাকলেও মেজর ত্রিবেদীর নিষ্ঠুরটা বিকাশ রায়ের মাপা অভিনয়ে অত্যন্ত বাস্তব আকার ধারন করেছিল।  এই নেগেটিভ চরিত্র তাঁকে এতটাই জনপ্রিয় করে তুলেছিল যে রাগে আর ঘৃণায় দর্শকের সারা শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটত।  ছবির শেষ দৃশ্যে জনাত্রিশেক মানুষ পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে গিয়েছিল ত্রিবেদী-রূপী বিকাশকে।  এই দৃশ্যে কোন ডামি ব্যবহার করেননি বিকাশ।  সত্যি সত্যিই লোকজনেরা তাঁকে মাড়িয়ে গিয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে।  এরজন্য বিকাশ আহতও হয়েছিলেন। গাল-গলা ফুলে যাবার দরুন তিনি বেশ কিছুদিন শক্ত খাবার খেতে পারেন নি, তরল খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছিল।  ছবি রিলিজের পর এমন অবস্থা হোল যে বিকাশ রাস্তায় বেরলেই নানারকম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তেন।  

৪২ ছবিতে মেজর ত্রিবেদীর ভূমিকায় বিকাশ রায়

রাস্তার লোকেরা তাঁকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করল, কেউ কেউ আবার বিকাশকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করতে শুরু করলেন, একদিন তো একজন নিজের জুতো খুলে বিকাশকে পেটাতে শুরু করলেন, তিনি ভুলেই গেলেন পর্দায় মেজর ত্রিবেদীরূপী বিকাশ আর বাস্তবজীবনের বিকাশ এক নয়।   মার খেতে খেতে বিকাশ বুঝলেন তাঁর অভিনয়ের এর থেকে বড় স্বীকৃতি আর হতে পারে না।  স্ত্রী কমলা রায়-কেও বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাঁর স্বামীর সম্পর্কে নানা ধরনের বাঁকা কথা শুনতে হোল, কিন্তু তিনি তাঁর স্বামীকে খুব ভালো করেই চেনেন, পর্দার বিকাশ রায় ও ব্যাক্তিজীবনের বিকাশ রায় সম্পূর্ণ যে আলাদা ব্যাক্তি।  
নায়ক প্রদীপকুমারের সাথে বিকাশ রায় ৪২ ছবিতে

জানতে পারলেন তাঁর ছেলেও বিয়াল্লিশ সিনেমাটা দেখতে গিয়ে কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না ঘরে তার সাথে সবসময়ের বন্ধু তার বাবা এইরকম কুখ্যাত অত্যাচারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারে।  ব্যাপারটা এমন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াল যে বিকাশ রায় বাধ্য হলেন ট্যাক্সিতে স্টুডিয়ো পাড়ায় যাতায়াত করতে।     

 

রত্নদীপ ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুপ্রিতি ঘোষের গাওয়া একটি গান

রত্নদীপ ছবির হিন্দি ভার্সন -এর একটি হিট গান 

 

বাকীটুকু পড়তে দ্বিতীয়পর্বে ক্লিক করুন

 

কোন মন্তব্য নেই: